Home

শিক্ষার্থী ১০ - পদ্ধতি, গেইম এবং উপকরণসমূহ

Adapted by UBR - Comprehensive Sexuality Education - Master Trainer Team

পাঠ পরিকল্পনা ১০: এইচআইভি/এইডস: তোমাদেরও কিছু ভূমিকা আছে

সংবাদপত্রের প্রবন্ধ এবং কাজ

নোট: শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন থেকে এইচআইভি/এইডস বিষয়ে প্রবন্ধ / বিবৃতি / প্রকাশনা / তথ্যাবলী সংগ্রহ করবে। পরবর্তী সেশনে প্রতিটি সংগ্রহের উপরে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব চর্চা করবে।

১ম প্রবন্ধ:

বাংলাদেশে গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তায় এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচি:

বাংলাদেশ দু’বার গ্লোবাল ফান্ড থেকে অনুদান পেয়েছে। প্রথম দফায় যুব সমাজের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫বছরের (২০০৪-২০০৯) জন্য অনুদান পেয়েছে এবং দ্বিতীয় দফায় আগের কর্মসূচিকে জোরদার করা এবং সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরো ৫ বছরের (২০০৭-২০১২) জন্য অনুদান পেয়েছে। এই দু’টি প্রকল্পের অর্থ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে সেভ দি চিলড্রেন। এছাড়াও, প্রথম দফার অনুদান সফলভাবে ব্যবহার করার স্বীকৃতিস্বরূপ আগের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে গ্লোবাল ফান্ড অতিরিক্ত ৬ বছরের (২০০৯-২০১৫) জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। অতিরিক্ত এই অনুদানকে বলা হচ্ছে আরসিসি-রোলিং কন্টিনিউশন চ্যানেল ফান্ড।

গোবাল ফান্ডের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের এইচআইভি/এইডস কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। এই কার্যক্রম এশিয়ার মধ্যে সেরা চর্চা-ও মর্যাদা লাভ করেছে। এছাড়াও গ্লোবাল ফান্ডের কার্যক্রম হিসেবে “এ” রেটিং পেয়েছে। বাংলাদেশের কার্যক্রমকে ১৩টি প্রধান ভাগে ভাগ করে ৪৪টি সংস্থা নিয়ে গঠিত ১৩টি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেভ দি চিলড্রেন প্রকল্পের কর্মসূচি ব্যবস্থাপনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, কারিগরি নির্দেশনা,পরিবীক্ষণ,পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ও সমন্বয়ে পরিচালিতকান্ট্রি কো-অর্ডিনেটিং মেকানিজম (সিসিএম)-এর তত্ত্বাবধানে কাজ করে থাকে।

প্রচারাভিযানের মাধ্যমে এইচআইভি কিভাবে ছড়ায় সংক্রান্ত জ্ঞান প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে (৪৪% থেকে ৮৫%), এইচআইভি সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি যে সবার মধ্যে রয়েছে সেক্স সংক্রান্ত জ্ঞান শহরতলীর যুবকদের মধ্যে বেড়েছে (৯.৫৫থেকে ১৪.৩১) এবং যুবসমাজের মধো কনডম ব্যবহারের হার ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৪ শতাংশ হয়েছে। যৌনকর্মীদের কাছে যায় এমন তরুণ খদ্দেরদের মধ্যে কনডম ব্যবহার ২০০৫ সালের ১৪.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০৮ সালে ৪৮.৩ শতাংশ হয়েছে। (প্রকল্পের ২০০৮ সালের এন্ড লাইন সার্ভে অনুযায়ী) সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন সহজ নয়। যে কারণে প্রতিটি বার্তা তৈরি করার সময় বাংলাদেশের সংরক্ষণশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক নিয়ম-কানুনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কর্মসূচি তৈরিকালে গ্রামের নারী ও মেয়ে শিশুদের কথা মনে রেখে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। পরবর্তীতে কাজ করতে গিয়ে জানা গিয়েছে যে, সমাজের বাসিন্দারা এখনো কনডম সংক্রান্ত বার্তা সরাসরি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয়। তাছাড়া টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারাভিযান পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।

পুরুষ ও যুবসমাজের মধ্যে এইচআইভি সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব এবং কনডম ব্যবহারের নি¤œহার খুবই সুস্পষ্ট। বাংলাদেশের সমাজে কনডম ব্যবহারের ব্যাপারে সামাজিক নীরবতা ও যে অপবাদের ভয় জড়িয়ে আছে তা যৌন সংক্রমণও অন্যান্য যৌন রোগ প্রতিরোধ ও সুরক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ। এ ধরনের সামাজিক পরিস্থিতি অবিবাহিত ছেলেদের কনডম কেনা থেকে বিরত রাখে, কিন্তু তারা যৌন কাজ থেকে বিরত হয় না। এই অবস্থায় কনডম ব্যবহারের উপকারিতা ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার যাতে করে এ নিয়ে যে লজ্জা কাজ করছে তা কেটে যায় এবং নিরাপদ যৌন কাজ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কনডম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

(দি গোবালফান্ড টু ফাইট এইডস, টিউবার কিউলোসিস এবং ম্যালেরিয়া, জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ, বাস্তবায়নকারী অংশীদার সংস্থা-মাত্রা কনসোর্টিয়াম।)

আলোচ্য বিষয়ে অনুশীলনের জন্য নমুনা প্রশ্ন

তোমার দলকে নিয়ে কাজ কর, প্রথমে প্রবন্ধটি ভাল করে পড় এবং তারপর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

  • এই প্রবন্ধের পাঁচটি প্রধান বিষয় কি কি?
  • প্রবন্ধের মূল বক্তব্য কি?
  • প্রবন্ধটি তোমার কি কাজে লাগবে?
  • তোমার কি মনে হয় এই উদ্যোগ যাদের প্রয়োজন তাদের সাহায্য করবে? কেন? ইত্যাদি... তোমার প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের সবার সামনে তুলে ধরার জন্য লিখে রাখ।

২য় প্রবন্ধ:

এইডস নিয়ে বেঁচে থাকা এইডস এখন কোনো আতঙ্কের নাম নয় এইচআইভি:

এইডস মানেই মৃত্যু নয়। এ রোগ নিয়েই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছেন অনেকে। অতীতে সামাজিক সচেতনতার অভাবে এইডস রোগীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হলেও এখন আর সে অবস্থা নেই। এ বিষয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘ ১৯ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি থেকে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরেন মাহমুদ আলী (ছদ্মনাম)। কি রোগ তখনও জানতে পারেননি তিনি। চিকিৎসকরা জানান, দেশে গিয়ে চিকিৎসা করালেই ভালো হয়ে যাবে। দেশে ফিরে সিলেট নগরীর আম্বরখানার একটি রোগ নিরূপণ কেন্দ্রে নিজের শরীরের রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তিনি এইডস আক্রান্ত। উন্নয়ন সংস্থা আশার আলো সোসাইটির মাধ্যমে নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে দিনযাপন করছেন মাহমুদ আলী। বর্তমানে ওই উন্নয়ন সংস্থায় একটি বিশেষ দায়িত্ব পালন করে তিনি সংসারের খরচও জোগাচ্ছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মনে অইতো (মনে হতো) বাঁচতাম নায়। পরে বুঝছি, ইতা (এসব) ভুল মাথ (কথা)। চিকিৎসা করাইলে, সচেতন অইয়া (হয়ে) চললে এইডস লইয়াও ভালা (ভালো) থাকা যায়।

এ বক্তব্য সমর্থন করে এইডস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মুনির আহমেদ বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত এ রোগ নিয়ে বেঁচে আছেন এ রকম অনেক নজির রয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা করালে ও সচেতনভাবে জীবনযাপন করলে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা অসম্ভব নয়। এইডস বিষয়ে সেবা প্রদানকারী আশার আলো সোসাইটির বিভাগীয় সমন্বয়ক তাহমিনা বেগম জানান, এইচআইভি জীবাণু নিরূপণের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাউন্সিলিং (পরামর্শ) দেয়া হয়। পরে রোগ নিরূপণ করতে তারা নিজেরাই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সিডিফোর (শরীরের রোগ প্রতিরোধ কোষের সংখ্যা) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়। নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে এ রোগ নিয়েও সুস্থ মানুষের মতোই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায়। চিকিৎসা ও ওষুধের ক্ষেত্রে রোগাক্রান্তদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় না, কারণ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে ওষুধ দিচ্ছে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মা এইচআইভি (এইডসেরজীবাণু) পজিটিভ হলেও নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে নিজ শরীর থেকে গর্ভেও সন্তানের শরীরে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়। আশার আলো সোসাইটির বিভাগীয় সমন্বয়ক তাহমিনা বেগম জানান, ২০০৩ সাল থেকে সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৫২৮ জনের শরীরে এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৪ জন। এইচআইভি পজিটিভদের মধ্যে ৩১৩ জন জীবিত আছেন।

তাহমিনা বেগম মনে করেন, তিন দিকে ভারত সীমান্ত এবং প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে সিলেট অঞ্চল রয়েছে এইডসের ঝুঁকিতে। এইডস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মুনির আহমেদ জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৮ জন। এর মধ্যে ১০৩ জন এইডস। ইউএনএইডসের ২০১২ সালের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দেশে ২ হাজার ৮৭১ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। এইডস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২০১ জন। এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৩৯০জনের। এক সময় অমানবিকতার শিকার হতেন এইডস আক্রান্তরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এইডস আক্রান্ত সিলেটের বিয়ানী বাজারের এক নারীর জীবনের করুণ কাহিনী। প্রবাসীর এ স্ত্রী এইডস আক্রান্ত হয়েছেন জানার পর ভাসুর-দেবর ও শ্বশুর মারধর করে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাকে। শেষ আশ্রয় হিসেবে বাপের বাড়ি কানাই ঘাটে গিয়েও ভালো থাকতে পারেননি তিনি। সাত বছর বয়সী এইডস আক্রান্তÍ তার একমাত্র কন্যা সন্তান দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। তিনি ও তার কন্যাকে বাইরে বের হতে এমনকি দীর্ঘদিন গোসল করতেও দেয়নি আশপাশের লোকজন। খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হয়েছে দিন। স্বামীর বাড়ি থেকে আসার পর গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও তিনি এইডস আক্রান্তÍ জানার পর কোনো কাজই তার ভাগ্যে জোটেনি। ২০০৫ সালে সৌদি আরব প্রবাসী ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় এ নারীর। ওই লোক নিজে এইডস আক্রান্তÍ জানার পরও তা গোপন করে বিয়ে করেন। এর খেসারত দিতে হয় স্ত্রীকে। ওই ব্যক্তির ঔরসজাত কন্যা সন্তানটিও জন্মসূত্রে এইডস আক্রান্ত হয়। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এ নারী। তিনি জানতে চান, কী অপরাধ তার। কেন তার জীবনটা এভাবে নষ্ট হয়ে গেল? আশার কথা হচ্ছে, এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এ নারীসহ এইচআইভি এইডস আক্রান্ত অনেকের জীবন এখন বদলে গেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা দাঁড়িয়েছে তাদের পাশে। তারা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। তারা অনেকেই এখন গৃহপালিত পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের আশ পাশের লোকজনকে বুঝিয়েছেন, এইডস আক্রান্ত স্বামীর মাধ্যমে কনডমবিহীন যৌন সম্পর্কের কারণে স্ত্রীদের এইডস আক্রান্তÍ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্ত্রী থেকে গর্ভের সন্তানও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ বা তার ব্যবহৃত সুই ও সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এইডস আক্রান্তÍ ব্যক্তির সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, একই বিছানায় ঘুমানো, একই আসবাবপত্র ব্যবহার এমনকি এইডস আক্রান্তÍকে চুম্বন করলেও এই রোগ ছড়ায় না। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এইডস মানে মৃত্যু নয় জানিয়ে ডা. মুনির আহমেদ বলেন, এইডস নির্মূল করা না গেলেও সচেতনতা ও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এজন্য সবাইকে এ রোগ সম্পর্কে জানতে হবে।

আলোচ্য বিষয়ে অনুশীলনের জন্য নমুনা প্রশ্ন

কাজ:

তোমার দলকে নিয়ে কাজ কর, প্রথমে প্রবন্ধটি ভাল করে পড় এবং তারপর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

  • এই প্রবন্ধের প্রধান বিষয় কি কি?
  • প্রবন্ধের মূল বক্তব্য কি?
  • প্রবন্ধটি তোমার কি কাজে লাগবে?
  • তোমার কি মনে হয় এই উদ্যোগ যাদের প্রয়োজন তাদের সাহায্য করবে? কিভাবে?
  • তোমার প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের সবার সামনে তুলে ধরার জন্য লিখে রাখ।

৩য় প্রবন্ধ:

এইচআইভি এইডস-এর বিস্তারের পেছনে ড্রাগ ও কনডম না ব্যবহারের ভূমিকা:

বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ড্রাগ অন্যতম ভুমিকা রাখছে। দেশে বর্তমানে ৫০ লক্ষ লোক মাদকাসক্ত। এর মধ্যে ৭৫ ভাগ হেরোইন বা ব্রাউন সুগারে আসক্ত, আর বাকী ২৫ ভাগ ফেন্সিডিলে আসক্ত। এনএএসপি ২০০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস এর জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগ ইউজার রয়েছে ২০-৪০ হাজার। মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণকারীদের মধ্যে হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত এর হার ৫৯.২%। সর্বোপরি মোট ১৬১৯ জন আইডিইউর মধ্যে হেপাটাইটিস সি এর হার ৫৪.২%। ঢাকা শহরের প্রথম শ্রেণীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী মারাত্বক আকারে ড্রাগে আক্রান্তÍ। এছাড়া ঢাকার একটি ছোট এলাকায় শুধুমাত্র ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারীদের ওপর পরিচালিত বিগত তিনটি জরিপের তথ্যে দেখা যায় এই বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪% থেকে ৮.৯% এবং সর্বশেষ ১০.৫%। এইচআইভি সংক্রমনের হার ১০% এর উপরে চলে গেলে সেটাকে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের এইচআইভি এইডস প্রতিরোধ প্রকল্প এইচআইভি এবং এইডস টার্গেটেড ইন্টারভেনশন (হাতি) প্রকল্প এর মাধ্যমে ৪০ হাজার ৫০০ জন মাদক সেবনকারী (সুই দ্বারা নেশা গ্রহণকারী এবং হেরোইন সেবী) দের সেবা দেয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী যৌন কর্মীদের ৪৪ শতাংশ একই শিরায় যারা মাদক গ্রহণ করে তাদের মধ্যে সিফিলিসের হার বেড়েছে যা এইডস এর ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নারী মাদক সেবীরা নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য যৌনকর্মে লিপ্ত হয়। এছাড়াও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবহৃত সুঁচ আবার বিক্রি করে ও মাদকাসক্তদের মধ্যে এ রোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে পেশাদার রক্তদাতারা অভাবজনিত কারণে রক্ত দিয়ে থাকে, যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ যৌনক্রিয়ায় আক্রান্ত থাকে। এছাড়া মাদকসেবীরা নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য রক্ত বিক্রি করে থাকে। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়। বাংলাদেশে কনডম ব্যবহারের হার অত্যন্ত কম। কনডম ব্যবহারকারীর হার ৮ দশমিক ৩ ভাগ।

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১১ বলছে, ১৯৭৫ সালেশূন্য দশমিক ৭ ভাগ পুরুষ কনডম ব্যবহার করতেন। বর্তমানে তা হয়েছে শতকরা ৬ ভাগ। অনাকাক্সিক্ষত পিতৃত্ব ঠেকানো ছাড়াও এইডসসহ বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগ থেকেও রক্ষার জন্য পুরুষরা কনডম ব্যবহার করে থাকে। কনডম ব্যবহারে যৌন রোগসহ এইচআইভি, এইডস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু কনডম ব্যবহারে পুরুষের ব্যাপক অনীহা রয়েছে। ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে সম্পন্ন বিসএস সমীক্ষা থেকে জানা যায়, রাস্তার যৌন কর্মীদের শতকরা ২৪ জন এবং যৌন পল্লীর ৪৪ জন কনডম ব্যবহার করেছিল। আবার কনডম ব্যবহারেরহার যৌন কর্মীদের নিয়মিত খদ্দেরদের ক্ষেত্রে অনেক কম। গ্রামাঞ্চলে যৌনমিলনকালে কনডম ব্যবহার অত্যন্ত কম। এটি শতকরা ৬ ভাগ। যদিও শহরাঞ্চলে কনডম ব্যবহারের হার প্রায় ১৭.৬ ভাগ। সমীক্ষায় দেখা গেছে কনডম ব্যবহারই এইডস আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা শতকরা ৬০ ভাগ কমিয়ে দিতে পারে। তাই কনডম ব্যবহার এইডস প্রতিরোধে অন্যতম মূখ্য ভুমিকা পালন করতে পারে। তবে অবাধ কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে অবাধ যৌনতা যাতে ব্যাপক বিস্তার লাভ না করে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কাজ

তোমার দলকে নিয়ে কাজ কর, প্রথমে প্রবন্ধটি ভাল করে পড় এবং তারপর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

  • এই প্রবন্ধের প্রধান বিষয় কি কি?
  • কত শতাংশ পুরুষ কনডম ব্যবহার করে?
  • মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তদের সংখ্যা কত?
  • সমীক্ষা বার্তা আমাদের কি বোঝায়?
  • তোমার প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের সবার সামনে তুলে ধরার জন্য লিখে রাখ।

৪র্থ প্রবন্ধ:

এইডস মোকাবেলায় আইন সংস্কারের আহ্বান ডেপুটি স্পিকারের -এইডসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ:

এইডসের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিদ্যমান আইনের সংস্কারের উপর গুরুত্বারোপ করে ডেপুটি স্পিকার কর্ণেল (অব.) শওকত আলী বলেছেন, এইচআইভি আক্রান্ত ও এ সংক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়ক আইনগুলোর সংস্কার না করায় সংশ্লিষ্টরা সহায়তার পরিবর্তে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের আইপিডি সম্মেলনকক্ষে বেসরকারী সংস্থা নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি (নুসা) আয়োজিত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এইডস ও এইচআইভি বিষয়ে আমাদের কণ্ঠকে আরও সোচ্চার করতে হবে। সংসদ সদস্য থাকি বা না থাকি সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এ সামাজিক দায়িত্ব পালনে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি এ বিষয়ে সংসদে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। অ্যাডভকেসি মিটিং উইথ মেম্বার অব পার্লামেন্ট অন এইচআইভি এন্ড এইডস প্রিভেনশন এন্ড দেয়ার রোলশীর্ষক এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব চক্রবর্তী। সেভ দ্য চিলড্রেনের শেখ মাসুদুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ননী গোপাল মন্ডল, জোবেদা খাতুন, নূর আফরোজ আলী, রওশন জাহান সাথী, শাহিদা তারেখ দীপ্তি, সুলতানা বুলবুল, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, রুবী রহমান ও চেমন আরা বেগম এবং সেক্স ওয়ার্কার নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া শিকদার প্রমুখ।

গোলটেবিল বৈঠক

এইডস নিয়ে অপবাদ দূর করতে সঠিক তথ্য চাই এইচআইভি বা এইডস রোগকে ঘিরে অপবাদ বা বৈষম্য দূর করার জন্য মানুষকে সঠিক তথ্য জানানো জরুরি। এইচআইভি বা এইডস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এইচআইভি সংক্রমণ, এমনকি তা থেকে এক পর্যায়ে এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও যথাযথ চিকিৎসা নিলে ৩০-১১-২০১২ তারিখে প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহায়তায় প্রথম আলো অপবাদ ও বৈষম্য এইচআইভি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে বৈঠকটির আয়োজনকরা হয়।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অনেকেই বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে এ দেশে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে কাজ চললেও এখনো এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি বা এইডস রোগী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যা দুঃখজনক। অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়ছে। অপবাদ বা বৈষম্য এইচআইভি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, এইডস নিয়ে বিশ্বে যখন প্রথম কাজ শুরু হয়েছিল, তখনো আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। সেই আতঙ্ক এখনো আছে। এইচআইভি ও এইডসকে ঘিরে অপবাদও বৈষম্যের মূলে রয়েছে এই আতঙ্ক। এইচআইভি আক্রান্ত বা এইডস রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় লক্ষণীয় অগ্রগতি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন অনেক ভালো ওষুধ পাওয়া যায়। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে এইডস নিয়ে মানুষ অনেক বছর বাঁচতে পারে। উদাহরণ দিয়ে নজরুল ইসলা মবলেন, ১৯৯০ সালে এ দেশে শনাক্ত হওয়া দ্বিতীয় এইডস রোগী এখনো বেঁচে আছেন। তাঁর সন্তানের দেহে এইচআইভি নেই। জাতীয় এইডস/ এসটিডি কার্যক্রমের লাইন ডিরেক্টর মো. আবদুল ওয়াহিদ বলেন, তাঁরা এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় না, তা জানানোর জন্য প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত গ্লাস, থালা-বাসন বা কাপড় ব্যবহার করলে, সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পুকুরে ¯œান করলে, সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত চুষে মশা আরেকজনকে কামড়ালে বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করলে এইচআইভি ছড়ায় না।

এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান মুক্ত আকাশ-এর নির্বাহী পরিচালক মুক্তি বলেন, পরিবারে ও সমাজে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা এখনো নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও অযৌক্তিক আচরণের ঘটনা আছে। মুক্তি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তিনি এইচআইভি সংক্রমিত এক অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। রোগী নিজে থেকে জানান তিনি এইচআইভি পজিটিভ। এ কথা জানার পর ওই চিকিৎসক অস্ত্রোপচারে রাজি হননি। যেসব দেশে বৈষম্যমূলক আইন আছে, সেখানে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা সেবা কম পায় বলে উল্লেখ করেন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, এ দেশের কিছু আইন সমকামী বা হিজড়াদের মতো এইচআইভি সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষের ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে। সালেহ আহমেদ জানান, তাঁদের কর্ম এলাকায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।

আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি বা এইডস রোগী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, এই অভিযোগ নিয়ে আইনজীবীদের কাছে কেউ আসছে না। এ বিষয়ে ভারতের আদালতে একাধিক ইতিবাচক রায় হয়েছে উল্লেখ করেও তিনি বলেন, বাংলাদেশেও আইনি হাতিয়ার ব্যবহার করার সুযোগ আছে।

বৈঠকে তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে দুই শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদেরও একজন জেবিন আলম বলেন, কিশোর-কিশোরীরা সঠিক তথ্য জানার জন্য কার কাছে যাবে, তা ঠিক করতে পারে না। মো. আফতাব উদ্দিন নামের অন্যজন বলেন, পাঠ্য বইতে এইচআইভি ও এইডস বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অনেক শিক্ষকই শ্রেণীকক্ষে বিষয়টি পড়ান না।

একাধিক আলোচক পাঠ্যপুস্তকের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে অপবাদ ও বৈষম্য দূর করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

তোমার দলকে নিয়ে কাজ কর, প্রথমে প্রবন্ধটি ভাল করে পড় এবং তারপর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

  • এই প্রবন্ধের প্রধান বিষয় কি?
  • এইচআইভি/এইডস বিষয়ক আইনের সংস্কার না করায় কি হচ্ছে?
  • তোমার কি মনে হয় আইন প্রণেতাদের সাথে এইডস নিয়ে কথা বলা একটি ভাল জিনিস?

কেন/ কেন নয়?

  • শিক্ষার্থীদের এইচআইভি/এইডস এর বিষয়ে কি কি তথ্য প্রয়োজন? একটি তালিকা তৈরি কর।
  • তুমি কি স্পিকারের সাথে একমত? কেন / কেন নয়?
  • তোমার প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের সবার সামনে তুলে ধরার জন্য লিখে রাখ।

৫ম প্রবন্ধ:

এইচআইভি ঝুঁকিতে তরুণ প্রজন্ম (যুবরা এইডসের ব্যাপারে অজ্ঞ):

তৌফিক মারুফ এর লেখা এইডস/এইচআইভির প্রসঙ্গ উঠলেই সবাই খালিআমগোর কথা কয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ভালো ভালো ঘরের মাইয়া-পোলারাও যে এখন অনেক বেশি অনিরাপদ যৌনাচারের ও মাদক গ্রহণেরমাধ্যমে ঝুঁকির মুখে রয়েছে তা কেউ দেখে না। অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই যৌনকর্মীদের এক নেত্রী এ কথা বলেন। প্রায় একই সুরে কথা বলেন হিজড়াদের এক নেতা। সেক্স ওয়াকার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া শিকদার বলেন, হিজড়া দেখলেই সবাই মনে করে এইডস/এইচআইভি ছড়ানোর একমাত্র কারণ আমরাই। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি। এর বাইরে সাধারণ তরুণ প্রজন্মকেও রক্ষার উদ্যোগ বাড়ানো দরকার। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)বাংলাদেশের জাতীয় কর্মসূচির এইচআইভি কর্মকর্তা ড. এজাজুল হক বলেন, পুরো জনগোষ্ঠীকে একসঙ্গে টার্গেট করে কাজ করা অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুস্কর।

এছাড়া ঢালাওভাবে সচেতনতা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টির সুযোগ থাকে। তবু আমরা এইডস/এইচআইভিকে নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চাই না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পর্যায়সহ তরুণ প্রজন্মের যারাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হয়, তাদের পরীক্ষা ও সচেতনতার আওতায় আনা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষিত (১ ডিসেম্বর ২০১০) হিসাব অনুসারে, দেশে সর্বমোট এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দুই হাজার ৮৮। এইডস রোগী মোট ৮৫০ জন। এইডসে মারা গেছে মোট ২৪১ জন। ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকার ৩২ হাজার ২০৯ জনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ও মৃতদের শনাক্ত করা গেছে। এ ছাড়া সরকারের ধারণা, দেশে মোট সাত হাজার ৭০০ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি থাকতে পারে। যদিও বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে, বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজারের মতো। আক্রান্তদের মধ্যে যৌনকর্মী ছাড়াও স্বাভাবিক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছে। আছে কোমলমতি শিশুরাও। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজের নাম প্রকাশনা করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকাসহ সাধারণ অলিগলিতে বিনোদন কেন্দ্র, আবাসিক হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁর নামে বাণিজ্যিকভাবে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অবাধে মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেসব স্থানে একাধারে মাদক ও যৌনাচারেরও সুযোগ পায় উঠতি প্রজন্ম। তাদের মধ্যে এইডস/এইচআইভি সম্পর্কে কোনোই ধারণা নেই। আবার তারা পরিস্থিতির কারণে অনিরাপদ যৌনাচারেই লিপ্ত হয়। ওই শিক্ষকের মতে, কেবল রাজধানীতেই নয়, এমন প্রবণতা এখন দেশের বিভিন্ন শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাতীয় এইচআইভি/এসটিডি এবং সেইফ বাডট্রান্সফিউশন প্রোগামের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. আবদুল ওয়াহিদ বলেন, যৌনকর্মী, হিজড়া, সমকামী, শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ বলা হলেও বাকিরাও ঝুঁকির বাইরে নয়। স্বাভাবিক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এইচআইভি/এইডসবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু চিকিৎসাও পরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ডা. ওয়াহিদ। সরকারের জাতীয় এইচআইভি/এসটিডি এবং সেইফ বাডট্রান্সফিউশন প্রোগাম সূত্রে জানা গেছে, এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের চলমান এইচএআইএস (এইচআইভি/এইডস ইন্টারভেনশন সার্ভিস) প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ৩৫৮টি ডিআইসিতে শ্রেণী বিন্যাসের মাধ্যমে ইনজেক্ট ড্রাগ ইউজার, নারী যৌনকর্মী, পুরুষ সমকামী, হিজড়া যৌনকর্মী নিয়ে কাজ চলছে। একই সঙ্গে ৩৯ উপজেলায় ২১৫টি এলইসি ক্লাব ও ১০২টি ভিসিটি রয়েছে।এ ছাড়া চালু আছে ইয়ু ফ্রেন্ডলি হেলথ সার্ভিসের আওতায় ২২৪টি হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি পয়েন্ট (এইচএসডিপি)। এ এইচএসডিপিতে ১৫-২৪ বছর বয়সের যে কেউ চিকিৎসা সহায়তা নিতে পারে। এসবের বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মোট ১৪৬টি রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র চালু আছে। আরো ৫৬টির প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)-এর একতথ্য মতে, সারা দেশে এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ ৪৩ হাজার পুরুষ সমকামীও ৯ হাজার হিজড়ার খোঁজ পাওয়া গেছে। গত ৮-১০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেজাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এইডস বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে মিলিতহন বিশ্বনেতারা। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, গবেষক, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিশ্বব্যাপী এইডস প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মকা-ের অগ্রগতি পর্যালোচনা, বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময়তরুণ প্রজন্মকে ঝুঁকির মধ্যে বিবেচনায় এনে এইচআইভি প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বনেতাদের প্রতি ২০১৫ সালের জন্য ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে যৌনকর্মের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণের হার বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন- তরুণ তরুণী, সমকামী ও যৌনকর্মী এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেয়ায় নতুন করে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ, এক কোটি ৩০ লাখ লোকের জন্য এইচআইভি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে টিবি (যক্ষ্মা) মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ হ্রাস করা, মা থেকে সন্তানের দেহে এইচআইভি সংক্রমণ নির্মূল করা, মায়েদের বাঁচিয়ে রাখা এবং নারী, শিশু ও পরিবারের স্বাস্থ্যউন্নয়ন, এইডসের কারণে এতিম ও অসহায় শিশুদের শিক্ষায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং এইচআইভির কারণে প্রবেশ, অবস্থান ও বসবাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশের সংখ্যা ৫০ শতাংশ হ্রাস করা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ওই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে ফিরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানান, দেশে এইচআইভি আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমণের হার নি¤œ পর্যায়ে রাখার ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী লিখিতভাবে বলেন, এসব অর্জনসত্ত্বেও আমাদের সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী এবং তাদের এইচআইভি বিষয়ক সচেতনতা বেশ কম। আমরা এসব তরুণ ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সার্বজনীন সুযোগ ও সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বদ্ধ পরিপক্ক।

সংবাদপত্র থেকে নেয়া:

বাংলাদেশে বয়স ১৮ হওয়ার আগেই যৌন অভিজ্ঞতা রয়েছে ৫০ শতাংশ শহুরে তরুণের। এছাড়া প্রায় ৮০ শতাংশ তরুণ পরোক্ষভাবে প্ররোচিত হয়ে যৌন কর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। এদের এক-তৃতীয়াংশ আবার লিপ্ত হচ্ছেন দলগত যৌনকর্মে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের যৌনসঙ্গী হচ্ছেন পেশাদার যৌনকর্মী। কিন্তু এসব তরুণের অর্ধেকই যৌনকর্মে একদমই নিরোধ ব্যবহার করছেন না। বাকীরাও নিরোধ ব্যবহারে অনিয়মিত। তাই তাদের মধ্যে এইডস ঝুঁকি বাড়ছে। আইসিডিডিআরবি পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে এমন অনিরাপদ যৌনকর্মের মাধ্যমে ৫২ শতাংশ এইডস ছড়ায় বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিউএইচও)। জাতীয় এইডস কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “তরুণরাই বেশি এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে। পেশাদার যৌনকর্মীর কাছে যেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া তরুণের প্রায় ৭৯ শতাংশই এইডস সম্পর্কে সচেতন নন। যৌন মিলনের পর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করলে এইডস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বলেও মনে করেন তারা। যৌনকর্মে লিপ্ত হতে এসব তরুণের ৮০ শতাংশ যাচ্ছেন আবাসিক হোটেলে। আর ২০ শতাংশ অপেশাদার যৌনকর্মীর কাছে যাচ্ছেন। আর জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ তরুণ হওয়ায় দেশের বৃহৎ ও নিভর্রশীল এই জনগোষ্ঠী ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, তরুণদের অধিকাংশ যৌন চাহিদা মেটাতে যৌনকর্মীর কাছে যাচ্ছেন। সব ধরণের যৌন আচরণ করছেন। (অনেক তরুণ মনে করেন, প্রতিরোধ ছাড়া যৌন মিলন সবসময় ভয়ঙ্কর নয়। কেবল মাত্র এইডসে সংক্রমিত হবে যদি যৌন মিলনের সময় বীর্য একজন নারীর মধ্যে বের করা হয়, আর যদি বীর্য বাইরে বের করা হয় তবে শুক্রানু বাইরে যাবে এবং নিরাপদ থাকবে।) অনেকে একবার ব্যবহারের পর কনডম ধুয়ে রেখে দেয় যাতে সে সেইদিন বা পরে আর একদিন সেটা ব্যবহার করতে পারে। সে বলে আমি কনডম কেনার জন্য টাকা নষ্ট করি না। আমি একটাই ব্যবহার করি এবং সেটা ধুয়ে আরেকদিন ব্যবহার করার জন্য ঠান্ডা যাগায় রেখে দিই। আমি তখনই এটা ফেলে দিই যখন এটায় ছিদ্র দেখা যায়। এটাও একটা নিরাপদ মাধ্যম।)

কাজ

তোমার দলকে নিয়ে কাজ কর, প্রথমে প্রবন্ধটি ভাল করে পড় এবং তারপর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

  • প্রবন্ধের প্রধান বিষয় কি কি?
  • তুমি কি প্রবন্ধের তথ্য গুলো ধরতে পেরেছ?
  • কমপক্ষে দুইটি বিষয়ের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য দাও।
  • সুযোগ পেলে তুমি এই তরুনদের কি বলবে?
  • তোমার কি মনে হয় অনেক পুরুষেরই সঠিক তথ্য জানা নেই?
  • তোমার প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের সবার সামনে তুলে ধরার জন্য লিখে রাখ।

সংবাদপত্রের কাজের জন্য নির্দেশিকা।

গবেষণা

প্রত্যেক দল একত্রে বসে সময় নিয়ে তাদের প্রবন্ধ পড়বে। সম্ভব হলে সবার জন্য একটা করে প্রিন্ট নিন। প্রবন্ধের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর তৈরি করার জন্য প্রত্যেক দলকে ১০ মিনিট প্রবন্ধ পড়ার জন্য এবং ১০ -১৫ মিনিট আলোচনার জন্য দিন। যদি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নগুলো বেশি কঠিন হয় তবে আপনি প্রশ্নগুলোকে সহজ করে দিতে বা নতুন প্রশ্ন তৈরি করে দিতে পারেন। হাতের কাছে থাকলে আপনি স্থানীয় পত্রিকার একটি প্রবন্ধও নিতে পারেন।

উপস্থাপনা

প্রত্যেক দল তাদের প্রশ্নের উত্তর পড়ার জন্য দু’জন বক্তাকে সনাক্ত করবে। প্রথম বক্তা পুরো দলের জন্য প্রবন্ধের পাঁচটা মূল বিষয় পড়বে। দ্বিতীয় বক্তা এরপর প্রবন্ধের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো পড়বে। প্রথম বক্তা দলের তৈরি প্রশ্নের উত্তর উপস্থাপন করতে পারে। পুরো দলকে তাদের অনুভূতির কথা জিজ্ঞাসা করা হবে এবং যে প্রসঙ্গগুলো উঠে আসবে সে ব্যাপারে আলোচনা করতে উৎসাহ প্রদান করা হবে।

বিশেষ নোট

আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে তারা বক্তব্যগুলোর সাথে একমত কিনা।

EKN
Top