Home
প্রশ্ন:মাসিকের রক্ত কি দূষিত?

উত্তর: অনেকে মনে করে দেহ থেকে মাসিকের সময় যে রক্ত বের হয় তা খারাপ রক্ত। তাদের ধারণা শরীরের ভেতর রক্ত খারাপ বা নষ্ট হয়ে মাসিকের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। প্রতিমাসে জরায়ুতে যে রক্ত জালিকায় বিছানা তৈরি হয় তা একটি ভ্রুণকে ধারণ করার জন্যই তৈরি হয়; যে ভ্রুণ থেকে একটি শিশু জন্ম নেয়। সেই রক্ত জালিকার বিছানা কখনই খারাপ বা নষ্ট কিংবা বদ কোন রক্ত দিয়ে তৈরি হতে পারে না। শুক্রাণু আর ডিম্বাণু মিলিত না হলে সেই রক্ত জালিকার বিছানাটিই মাসিক হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। সুতরাং মাসিকের রক্ত নষ্ট বা খারাপ রক্ত না।

প্রশ্ন: মাসিকের সময় টক খেলে কি রক্তপাত বেশি হয়?

উত্তর: মাসিক চলাকালীন অনেক কিশোরীকে টক, ঝাল, বেগুন, ইলিশ মাছ, ডিম ইত্যাদি খেতে নিষেধ করা হয়। অনেক কিশোরী এই বিধি নিষেধ মেনে চলে। একটি শারীরিক প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে মাসিক সম্পন্ন হয়। এ সময় শরীর থেকে কিছু রক্ত বের হয়ে যায়। এ সময়ে কোন মতেই কম খাওয়া উচিত নয় বরং শরীরের পুষ্টি ঠিক রাখতে মাসিক চলাকালীন সময়ে বাড়তি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে আমিষ জাতীয় খাবার। মাসিকের সময় কোন মতেই কম খাওয়া ঠিক নয়। টক, ঝাল, বেগুন, ইলিশ মাছ, ডিম ইত্যাদি খেতেও কোন নিষেধ নেই।

প্রশ্ন: সাদা স্রাব কেন হয় ?

উত্তর: সাদা স্রাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে ছোটদের এবং বড়দের স্রাব একই কারণে নাও হতে পারে। অনেক সময় যৌনাঙ্গ অপরিষ্কার থাকা কিংবা অপুষ্টির কারণেও এটা হতে পারে। এর ফলে সামান্য চুলকানিও থাকতে পারে। সামান্য চিকিৎসায় এই সমস্যা সহজেই ভাল হয়ে যেতে পারে। যদি স্রাব থেকে দুর্গন্ধ, হলুদাভাব এবং চুলকানি হয় তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।

প্রশ্ন: মাসিকের সমস্যার সাথে মুখের ব্রনের কি কোন সম্পর্ক আছে?

উত্তর: মাসিকের সমস্যার সাথে মুখের ব্রণের কোনো সম্পক নেই।মুখে ব্রণ উঠা বয়:সন্ধিকালে একটি শারীরিক পরিবর্তন । বয়ঃসন্ধিকালে কারো কারো মুখে এসময় ব্রণ বা দানা দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ব্রণ আকার ছোট হয় এবং এমনিতেই চলে যায়। কাঁচা ব্রণে হাত দেয়া উচিত নয়, পাকলে চাপ দিয়ে ভিতরে সাদা অংশটি বের করে দেয়া যেতে পারে। প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খেলে, বেশী করে পানি পান করলে এবয় মুখমন্ডল পরিষ্কার রাখলে ব্রণ কম হয়। অল্প পরিমাণ সাবান দিয়ে মাঝে মাঝে মুখ ধুয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হয়। ব্রণ থেকে বেশী দাগ হয়ে গেলে চর্মরোগ বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া ভালো। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা বয়ঃসন্ধিকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বয়স থেকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে মাসিকের সমস্যা ও মুখের ব্রণ থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: মাসিকের সময় পেট ব্যথা করে কেন?

উত্তর: মাসিকের সময় কখনও কখনও প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। সব মেয়ে বা নারীরাই (৫০ ভাগ এক্ষেত্রে হতে পারে) যে এত ভোগে তা নয়। যাদের ব্যথা হয় তাদের যেসবসময় এমন ব্যথা হয় তাও নয়। প্রথম কয়েকবার মাসিকের সময় ব্যথা না হলেও পরে ব্যথা হতে পারে। প্রতিটি মেয়ে বা নারীর ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই ব্যথা হালকা বা তীব্র হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত পিঠে, তলপেটে ও উরুতে হয়। মাসিক শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগেও এই ব্যথা হতে পারে। আর এসব কিছুই মাসিক হওয়ার সংকেত। মাঝেমাঝে এই ব্যথা হঠাৎ করেই তীব্র হয়ে উঠতে পারে; এটি মাসিকজনিত পেশী সংকোচন। মাঝেমাঝে ব্যথার সাথে মাথাঘোরা, অবসাদ, ঘাম, কাপুঁনি, বমিবমি ভাব বা বমিও হতে পারে। এত ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। জড়ায়ুর ভিতরদিকের আস্তরটি বের হবার জন্য সংকোচন ও প্রসারণের জন্য এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মাসিকের আগে ও পরে পেটে ব্যথা করা খুব স্বাভাবিক।তবে এ সময় যা করা যেতে পারে যদি সম্ভব হয় তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে হবে। কিছু হালকা ব্যায়াম (যেমন: হাঁটা বা হাত-পা নাড়ানো)। তলপেটে বৃত্তাকারে হালকা মালিশ করলেও অনেকের ভালো লাগে এবং ব্যথা কমে যায়। খুব বেশী চা-কফি বা কোকাকোলা পানের অভ্যাস থাকলে এই সময় তা এড়িয়ে চলা। হালকা গরম পানি পান করলে ব্যথা কমাতে সহায়তা করবে। গরম পনির বোতল বা ব্যাগ দ্বারা সেঁক দেওয়া যেতে পারে। যদি এ ধরণের ব্যাগ না থাকে তাহলে এমনি যেকোনো বোতলে গরম পানি নিয়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে নিয়ে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। গরম পানি দ্বারা গোসল করলে তলপেটের, পায়ের ও পিঠের মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সহায়তা করবে। খুব বেশি ব্যথা গোসল হালকা মাত্রার ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করা যেতে পারে, যেগুলো সাধারণত ঔষুধের দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ঔষুধ সেবন করা।

প্রশ্ন:আমার প্রথম মাসিক হয়েছে কিন্তু আমার সারা শরীর থেকে ঘাম এবং ব্যথা হয় এখন কি করবো?

উত্তর: ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই অধিকাংশ মেয়েরা তাদের প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতা লাভ করে। মেয়েদের শরীরের ভিতর ডিম্বাশয়ে ডিম উৎপন্ন হতে শুরু করে। এটি মাসে একবার ঘটে। ‍ডিম্বাশয় থেকে ডিম বের হওয়ার আগে জরায়ু (মেয়েদের পেটের ভিতর একটা গহব্বর যেখানে শিশু বড় হয়) জরায়ুর দেয়ালে রক্তের আস্তরণ তৈরী হয় যাতে একটি শিশু সেখানে পরিপুষ্ট হতে পারে। যদি মেয়েটির ডিমটি পুরুষের শুক্রাণুর সাথে মিলিত না হয় (যৌন মিলনের মাধ্যমে) তাহলে শিশুর জন্ম হয় না। তখন জরায়ুর আস্তরণ ভেঙ্গে জন্ম হয়না। তখন জরায়ুর আস্তরণ ভেঙ্গে যোনীপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। একেই মাসিক বা ঋতুস্রাব। মেয়েদের মাসিকের প্রথম দিনগুলোতে পেটে, পীঠে বা মাথা ব্যথা হতে পারে।কিছু হালকা ব্যায়াম করে অথবা গরম পানি ব্যাগে/বোতলে ভরে শেক দিলে আরামবোধ হয়। এ সময় কারো কারো চুলকানি,শরীরে থেকে ঘাম বা অস্বস্তি লাগতে পারে। কেউ কেউ আবার খুব বিষন্নবোধ করে।সৌভাগ্যক্রমে এগুলো দুই-একদিনের বেশৗ থাকেনা।

প্রশ্ন: আমার যোনি অঞ্চলে প্রচুর ব্যথা পাই এবং তাতে আমার কষ্ট হয়, কিন্তু মাসিক হয় না?

উত্তর: মাসিক চলাকালীন সময় স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের যোনি অঞ্চল অন্য সময়ের মতো অনেক সংবেদনশীল থাকে।এ সময় যোনি অঞ্চলে প্রচুর ব্যথা হতে পারে।কেউ কেউ মাসিক শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই মানসিক চাপ অনুভব করে। তারা ক্লান্তবোধ করে, মাথা ব্যথায় ভোগে, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হয়, মুখ-চোখে শুকনো হয়ে যায়, স্তনে ব্যথা অনুভব করে, দুঃখবোধ করে। এসব কিছুই মাসিক হওয়ার পূব লক্ষণ।এই ব্যথা হালকা বা তীব্র হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত পিঠে, তলপেটে ও উরুতে হয়। মাসিক শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগেও এই ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা হঠাৎ করেই তীব্র হয়ে উঠতে পারে; এটি মাসিকজনিত পেশী সংকোচন। মাঝেমাঝে ব্যথার সাথে মাথাঘোরা, অবসাদ, ঘাম, কাপুঁনি, বমিবমি ভাব বা বমিও হতে পারে। এত হয় পাওয়ার কিছুই নেই।জড়ায়ুর ভিতরদিকের আস্তরটি বের হবার জন্য সংকোচন ও প্রসারণের জন্য এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।সৌভাগ্যক্রমে এগুলো দুই -একদিনের বেশি থাকে না।

প্রশ্ন: কত বছর থেকে মাসিক শুরু হয়?

উত্তর: ৮ - ১৮ বছর বয়সের মধ্যে যেকোনো সময় মেয়েদের মাসিক শুরু হতে পারে। যদিও অনেক মেয়ের মাসিক শুরু হয়ে যায় ১২ -১৩ বয়সের মধ্যে একজন অল্পবয়স্ক বালিকা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময়কালটিকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে।

প্রশ্ন: মাসিক হলে মা বলে বাতাস লাগছে, এটা কি ঠিক?

উত্তর: মাসিকের সময় পেট ব্যথা করে কেন? মাসিক নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। মেয়েদের মাসিক হওয়াকে অনেক সমাজে বিপদজ্জনক রোগ বা অসুখ মনে করে, অনেকে মেয়েদের দূষিত বলে মনে করে। এ সময় মেয়েদেরকে খোলা চুলে ঘর থেকে বের হতে দেয়না, সন্ধ্যার সময় কোথাও যেতে নিষেধ করে, অনেকে মেয়েদের কে ভাতের হাড়িঁ ধরতে দেয়না; রান্না-বান্নার কাজে রান্নাঘরে ঢুকতে দেয়া হয়না।সামাজিক কোনো আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বাধা প্রদান করে। কিন্তু মাসিক মেয়েদের একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। এতে কোনো মেয়ে দূষিত, খারাপ বা অসুখ হয়ে যায় না।শরীরের কোথাও কেটে গিয়ে রক্ত বেরুলে যেমন মানুষ দূষিত, খারাপ বা অসুখ হয়ে যায় না, এটাও তেমনি।একজন মেয়ে স্বাভাবিক মানেুষের মতই সংসারের সব কাজ করতে পারে, রান্না-বান্নার কাজ করেতে পারে, সামাজিক কোনো আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে।তাই মাসিক হলে বাতাস লেগেছে বললেও তা সঠিক নয়।তবে মাসিকে সময় সব মেয়েদের অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত।

প্রশ্ন: মাসিকের সময় টক খেলে কি হয়?

উত্তর: মাসিক চলাকালীন অনেক কিশোরীকে টক, ঝাল, বেগন, ইলিশ মাছ, ডিম ইত্যাদি খেতে নিষেধ করা হয়। অনেক কিশোরী এই বিধি নিষেধ মেনে চলে। একটি শারীরিক প্রক্রিয়ায় মাসিক সম্পন্ন হয়। এ সময় শরীর থেকে কিছু রক্ত বের হয়ে যায়। এ সময়ে কোন মতেই কম খাওয়া উচিত নয় বরং শরীরের পুষ্টি ঠিক রাখতে মাসিক চলাকালীন সময়ে বাড়তি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে আমিষ জাতীয় খাবার। মাসিকের সময় কোন মতেই কম খাওয়া ঠিক নয়। টক, ঝাল, বেগুন, ইলিশ মাছ, ডিম ইত্যাদি খেতেও কোন নিষেধ নেই।

প্রশ্ন: প্যাড ব্যবহার করতে না পারলে কি করব?

উত্তর: মাসিকের সময় প্যাড ব্যবহার না করতে চাইলেও মাসিক ব্যবস্থাপনা করার অনেক পদ্ধতি আছে যেগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সময়ে নারীরা তাদের মাসিক ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করছে। রক্তস্রাব সামলানোর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করাই হচ্ছে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।পৃথিবীব্যাপী এমন অনেক পদ্ধতিই নারীরা ব্যবহার করে থাকে। কেউ যদি মাসিকের সময় প্যাড ব্যবহার করতে না চাই তবে কাপড়ের প্যাড ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিষ্কার, নরম পুরোনো সুতির কাপড় আয়তকারে কয়েকভাজঁ করে পুরু প্যাড বানিয়ে নেয়া যায়।একটি ফিতা দিয়ে (এটা সেলোয়ার বা পায়জামার ফিতার মধ্যে কোমড়ের চারপাশে বাধা হয়।কাপড়ের প্যাডটি দুই পায়ের মধ্যে থাকে এবং এটির দু’মাথার ফিতার সাথে সেলাই করা থাকে; কয়েক ভাঁজ করা প্যাডটি রক্তস্রাব শুষে নেয়। এর উপরে চাইলে প্যান্টি পড়া যেতে পারে। কেউ কেউ প্যান্টি পড়তে চায় না বা যাদের প্যান্টি ব্যবহারের সামর্থ্য নেই এই পদ্ধতি মূলত তাদের জন্য।

প্রশ্ন: মাসিক সম্পর্কে ছেলেদের জানা কি দরকার ?

উত্তর: মাসিক সম্পর্কে অবশ্যই ছেলেদের জানা উচিত। কারণ মাসিক নিয়ে ছেলেদেরও যদি জানা থাকে তাহলে প্রজনন ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং সমান দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারবে। মেয়েদেরও ছেলেদের সম্পর্কে জানা উচিত।

প্রশ্ন: আমার মাসে ২বার মাসিক হয় কেন?

উত্তর: মাসিক বা ঋতুস্রাব সাধারণত ২৮-৩০ দিন অন্তর হয়ে থাকে।তবে কখনো কখনো কম বা বেশী অন্তর হতে পারে।প্রথম দুই বছর বেশীরভাগ মেয়েদেরই অনিয়মিত মাসিক হয়; অনেকের প্রতিমাসে মাসিক হয়, অনেকের কখনো কখনো দুইমাসে একবার আবার মাসে দুইবারও মাসিক হয়। মেয়েদের অল্প বয়সে, এই সময়ের পার্থক্য খানিকটা বেশী হতে পারে এবং পুরো চক্র বেশীদিন ও হতে পারে। মাসিক শুরু হওয়ার দিনটি এক সপ্তাহ এদিক ওদিক হয় তাকে স্বাভাবিক বা নিয়মিত বলেই ধরা হয়। হরমোন নামক এক ধরণের তরল জৈব পদার্থ যা শরীরে নালীহীন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় তার প্রভাবে মাসিক হয়। হরমোন রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন নির্ধারিত অঙ্গের ওপর কাজ করে শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়। বয়স হওয়ার সাথে সাথে এটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

প্রশ্ন: মেয়েদের দেখলে আমার যৌনানুভুতি জেগে ওঠে কেন ?

উত্তর: যৌনানুভুতি একটি স্বাভাবিক অনুভূতি। ছেলে-মেয়েদের যখন বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন শুরু হয় তখন অন্য অনেকগুলো পরিবর্তনের সাথে যৌন অনুভুতিরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এটা হরমোনের কারণে ছেলে ও মেয়েরা প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। ফলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভুত হয়। কিন্তু এ সময়ে যৌন অনুভূতি ও যৌন আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে হবে। না জানলে এই আকাঙ্ক্ষা নারীর প্রতি নিপীড়নের কারণও হতে পারে। আর তাই সঠিক তথ্য জানবো এবং নিজেকে গড়ে তুলবো।

প্রশ্ন: যৌন তৃপ্তি নির্ভর করে স্তন ও পুরুষাঙ্গের আকারের উপর ?

উত্তর: না, এধরনের কোন বিষয় নেই। যৌনতৃপ্তি নির্ভর করে পারস্পরিক সম্মতি, ভালবাসা, নিরাপত্তা, অংশগ্রহণ এবং দায়িত্বশীল আচরনের উপর। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার-আকৃতির উপর এর কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়াও নারী এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বা তৃপ্তি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ঘটে। যৌন সম্পর্ক তখনই আনন্দময় হয় যখন নারী-পুরুষ পরস্পর ধীর-স্থির ও পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। কোনপ্রকার চাপ বা জোর কিংবা নিরাপত্তাহীনতা কারোর জন্যই আনন্দময় সম্পর্ক দিতে পারে না।

প্রশ্ন: মেয়েরা বেশী সেক্সি হয় কেন?

উত্তর: এটা একধরনের ভ্রান্ত ধারণা। নারী-পুরুষ উভয়েই যৌনভাবে আকর্ষণীয় হতে পারে। এটা ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করে। তবে এখানে দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, নারী-পুরুষ শুধুমাত্র জৈবিক সত্ত্বা নয়, এর বাইরেও তাদের আরোকিছু পরিচিতি আছে। তাই শুধুমাত্র নিজের ধারনা দিয়ে অন্যের যৌনতার ব্যাখ্যা করা উচিত নয়।

প্রশ্ন:যৌন মিলনে তাড়াতাড়ি বীর্য বের হয় কেন?

উত্তর: যৌন সম্পর্কের সময় তাড়াহুড়ো ও অস্থিরতা থাকলে এটা ঘটতে পারে। তাই যৌন সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক আস্থামূলক, ভালবাসার, চাপমুক্ত এবং নিরাপদ। তবেই তা আনন্দময় হবে।

প্রশ্ন:ওরাল সেক্সের ফলে কোন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কী ?কীভাবে ?

উত্তর: হতে পারে। যেমন, মুখে যদি কোন ঘা বা হারপিস থাকে কিংবা মাড়ির ক্ষত থাকে তাহলে সঙ্গীর কোন ধরনের যৌনবাহিত সংক্রমণ থাকলে তা পরিবাহিত হবার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন:কত বছর বয়সে যৌন মিলন করা যায়?

উত্তর: যৌন মিলন অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হলে করা যায়। সাধারণত যৌন সম্পর্ক একটি দায়িত্বশীল আচরণ। কারণ এর সাথে ব্যক্তির স্বাস্থ্যঝূঁকি জড়িত। অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ সবসময়ই অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে যৌন মিলনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে যখন একজন ব্যক্তি নিচে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়ে ওঠে এবং দায়িত্ব নিয়ে কোন সংকটের মোকাবিলা করতে পারবে ঠিক তখনই।

প্রশ্ন: স্বাভাবিকভাবে একজন পুরুষ অন্য নারীর প্রতি আর্কষণ বোধ করে, কোনো কারণে কি এটি কমে যেতে পারে ?

উত্তর: মানুষের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরী হয় মন-মানসিকতা, পছন্দ,পারস্পরিক ভাল লাগা ইত্যাদি বেশকিছু সুক্ষ্ম বিষয়ের উপর। অনেক সময় যখন এ বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে তখন সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়তে পারে। আর তাই সম্পর্কে নিষ্ঠা, সততা, শ্রদ্ধা থাকা খুব জরুরী। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ছাড়া একটি সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।সম্পর্ক নিয়মিত পরিচর্যার বিষয়।

প্রশ্ন: প্রথম যৌনমিলনের সময় জরায়ুতে কি কোনো সমস্যা হয়?

উত্তর: সাধারণত কোন সমস্যা হবার কথা নয়। তবে যৌন সম্পর্কে যদি জোর-জবরদস্তি থাকে তাহলে তা কষ্টদায়ক হতে পারে। তাই সম্পর্ক হতে হবে ধার-স্থির, দায়িত্বশীল, পারস্পরিক সম্মতিতে এবং নিরাপদ।

প্রশ্ন: যদি ১ জনের সাথে যৌন মিলন করি তাহলে কি অন্য কারো সাথে যৌন মিলন করা যাবে না?

উত্তর: যৌন সম্পর্ক দাবি করে দায়িত্বশীল ও নিরাপদ আচরণ। একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তবে কোন একজনের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হলে পরবর্তীতে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করা যাবে না এমন নয়। তবে সকল সম্পর্কই নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন হতে হবে।

প্রশ্ন: ছেলেদের মত মেয়েদেরও কি সেক্স করতে ইচ্ছে করে।

উত্তর: হ্যাঁ, নারী-পুরুষ সকলেরই যৌন আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

প্রশ্ন: ভালো বন্ধুর গুণাবলী কি কি ?

উত্তর: ভালো বন্ধু সেই-ই যে তোমাকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে। তোমার ভাল-মন্দ খেয়াল রাখে। বিপদে-আপদে পাশে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে উৎসাহিত করে না। তোমার ভাল-খারপ উভয় কাজের জন্যই সমালোচনা করে এবং কোন চাপে রাখে না।

প্রশ্ন: আমি অনেক মেয়ের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছি এবং শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। এটা আমার কাছে নেশার মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নেশা থেকে আমার বের হবার উপায় কি?

উত্তর: অবশ্যই তুমি একটি অন্যায় কাজ করেছ। ভালোবাসার সম্পর্ককে এতো খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ঠিক একইরকম আচরণ তোমার সাথে কেউ করলে নিশ্চয়ই তোমার ভাল লাগবে না, অপমানিতবোধ করবে। আর তাই এই ধরণের মানসিকতা বাদ দিয়ে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। আর এই সময়ে যৌন সম্পর্কের প্রতি এই ধরনের আচরণ তৈরী হলে তা স্বাস্থ্যকর ও রুচিকর নয়। এটা নিপীড়নমমূলক আচরণ। একজন ব্যক্তি অপরের প্রতি এই ধরনের আচরণ করতে পারে না। তাই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো খুব জরুরী। এই পরিস্থিতিতে কাউন্সিলরের সাথে পরামর্শের জন্য যাওয়া খুব জরুরী। দ্রুত যোগাযোগ করতে পারো নিকটস্থ ইউবিআর যুববান্ধব কেন্দ্রে।

প্রশ্ন: আমার এক আত্মীয় যে কিনা বিবাহিত,সে আমার সাথে যখনই দেখা হয় তখনই সেক্সুয়াল আলাপ বেশি করে কিন্তু আমি এই ধরনের কথা শুনতে মোটেই রাজী নই। এই সমস্যার সমাধান কি?

উত্তর: তুমি যা পছন্দ করছো না তা স্পষ্টভাবে এবং দৃঢ়তার সাথে বলবে। সাধারণত তোমার নিশ্চুপ থাকা তাকে আরো উৎসাহিত করবে এ’ধরনের আলোচনা চালিয়ে যেতে।

প্রশ্ন: ছেলেদের সাথে মেয়েরা বন্ধুত্ব করলে লোকে খারাপ বলে কেন ?

উত্তর: ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব একটি খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়। লোকে খারাপ বলে কারণ, এর প্রতি লোকের অস্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি। সাধারণত আমাদের দেশে সকল নারী-পুরুষ সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে। কারণ নারী-পুরুষ সম্পর্কের মধ্যে বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা, ভালবাসা এই বিষয়গুলো আমাদের সমাজে কম আলোচিত বিষয়। যত কম আলোচনা হবে তত কম গ্রহনযোগ্যতা পাবে। আর তাই সঠিক তথ্য জানা এবং দায়িত্বশীল বন্ধুত্ব গড়ে তোলা জরুরী।

প্রশ্ন: কোন বন্ধুর সাথে সর্ম্পক করতে গেলে তা কতটুকু প্রযোজ্য হবে ?

উত্তর: এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে পরস্পরকে জানা, সময়, বয়স ইত্যাদির উপর। এর পাশাপাশি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও দায়িত্বশীলতার বিষয়গুলোও বিবেচনা করা উচিত। এমন সম্পর্কে যাওয়া উচিত নয় যেটা বাড়তি চাপ তৈরী করবে। তাই বুঝে শুনে সম্পর্ক তৈরী করা উচিত।

প্রশ্ন: ভালো লাগা ও ভালবাসার মধ্যে মূল পার্থক্য কি ?

উত্তর: ভাল লাগা একটি সাধারণ স্বতঃস্ফূর্ত আচরন। ভালবাসা তৈরী হয় ধীরে ধীরে, পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা, একে-অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া ইত্যাদি নানা বিষয় জড়িত। যেমন-আমরা বাব-মা, ভাই-বোন, সন্তানের প্রতি একটি সাধারণ ভালবাসার আকর্ষন বোধ করি যেটা আমরা একটি পারিবারিক বন্ধনের মধ্যে বড় হই বলে তৈরী হয়। কিন্তু বাইরের কারো সাথে এই সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগে। ভাল লাগা হলো ভালবাসার প্রাথমিক বহিঃপ্রকাশ।

প্রশ্ন:স্বপ্নস্খলন কি রোগ?

উত্তর: স্বপ্নস্খলন প্রায় সব ছেলেদের হয়। এটা খারাপ বা ভালো এ রকম কিছু নয় শরীরের কোন শক্তিই বের হয়ে যায় না। শরীরের ভিতর বীর্য তৈরী হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মেই তা বের হয়ে যায়। এটি কোন রোগ নয়। ফলে, যৌনশক্তি কমার কোন কারণ-ই নেই। বীর্য একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। রক্তের মাধ্যমে তৈরি হয় না।

প্রশ্ন: আমি ৯ম শ্রেনীতে পড়ি ? আমর এপর্যন্ত খুবই কম স্বপ্নস্খলন হয়েছে তাহলে আমার কি কোন সমস্যা আছে?

উত্তর: স্বপ্নস্খলন স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া এবং স্বাভাবিক নিয়মে ঘুমের মধ্যে লিঙ্গ থেকে বীর্য বের হয়। স্বপ্নস্খলন কম এবং বেশী হওয়ার সাথে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কোন সম্পর্ক নেই বা এটা কোন সমস্যা না।

প্রশ্ন: স্বপ্নস্খলন হলে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না কেন?

উত্তর: স্বপ্নস্খলন কোন রোগ না, অনেকের ধারণা, কারো স্বপ্নস্খলন হলে শরীর থেকে প্রচুর শক্তি বের হয়ে যায়; ফলে সে দুর্বল হয়ে পড়ে। যেহেতু স্বপ্নস্খলন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তাই স্বপ্নস্খলন হলে শরীর দুর্বল হওয়ার কোন কারণ নেই। বীর্য থলিতে জমা হওয়া বীর্য স্বপ্নস্খলনের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়, এখানে শক্তি ক্ষয় বা শরীর থেকে শক্তি বেরিয়ে শরীর দুর্বল হওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেনা। একজন মানুষের বয়স, ওজন এবং উচ্চতা অনুয়ায়ী যে পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন, সেই পরিমান মত পূষ্টিকর খাবার না খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানের অভাব থাকলে শরীর স্বাভাবিকভাবে দুর্বল হয়, দূর্বলতার কারণে অনেক সময় ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না । স্বপ্নস্খলনের কারণে ঘুম থেকে উঠতে পারার না পারার তেমন কোন কারণ নাই ।

প্রশ্ন: স্বপ্নস্খলন হলে কি ডাক্তার দেখাতে হবে?

উত্তর: স্বপ্নস্খলন কোন রোগ নয়। এটা স্বাভাবিক এবং বয়ঃসন্ধিকালে এটা প্রায়ই ঘটে। ঘুমের মধ্যে ছেলেদের লিঙ্গের মধ্যে দিয়ে বীর্য় বের হয়ে আসে এটাই স্বপ্নস্খলন। এটা ঘুমের মধ্যে ঘটে বলে এর উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না । চিকিৎসা বা ঔষধের মাধ্যমে স্বপ্নস্খলন ভালো করা সম্ভব নয়। স্বপ্নস্খলন সকল কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: স্বপ্ননদোষ সম্পর্কে মেয়েদের জানা কি দরকার ?

উত্তর: বেশিরভাগ কিশোরের ধারণা যৌন উত্তেজনায় মেয়েদের শরীর থেকে যেহেতু বীর্য বের হয়ে আসে না তাই তাদের স্বপ্নস্খলন ও হয় না। একজন ছেলে যেমন ঘুমের মধ্যে যৌনতা সম্পর্কিত স্বপ্ন দেখতে পারে একজন মেয়েও তেমনি দেখতে পারে। একজন ছেলের মত একজন মেয়ের ও বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিতে যৌন বিষয়ক চিন্তা করতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। এই ধরনের স্বপ্ন দেখার পর মেয়েদের বীর্যপাত হয় না ঠিকই, তবে তাদের যোনিতে যোনিরস নামে এক ধরনের রস আসে যার ফলে যোনিদেশে কিছুটা ভেজা ভেজা হয়ে যায়। এটা মেয়েদের জন্য বয়ঃসন্ধিতে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিটি ছেলে ও মেয়ের-ই স্বপ্নস্খলন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

EKN
Top