আমরা কি সেক্সুয়ালিটি বিষয়ে আলোচনা করতে পারি?
নিশ্চয়ই, এ বিষয়ে তুমি কি আলোচনা করতে চাও?
অনেকেই মনে করে, সেক্সুয়ালিটি আর সেক্স একই বিষয়।
এমনকি অনেকে ভাবে, সেক্স মানেই শারীরিক সম্পর্ক।
“শারীরিক সম্পর্ক না থাকলে সে শারীরিকভাবে সক্ষমই নয়”
এটাও বহুল প্রচলিত ধারণা।
কিন্তু এইসব ধারণা সত্য নয়।
প্রচলিত কথায় সেক্স মানে শারীরিক সম্পর্ককে বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে সেক্স বলতে ছেলে, মেয়ে তথা নারী-পুরুষের মধ্যকার জৈবিক পার্থক্যেই বোঝায়। শারীরিক সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক প্রতিটি প্রাণীই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেক্সুয়ালিটির অন্তর্গত। এমনকি কৌতুহলবশত ছোট ছেলেমেয়েরাও তাদের একান্ত ব্যক্তিগত শারীরিক অংশে স্পর্শ করে আনন্দ পায়।
ফিল্ম
(কিশোর কিশোরীদের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ক কিছু ফিল্ম সংগ্রহ করা যেতে পারে)
চলো আমরা শারীরিক মিলন ও ঘনিষ্ঠতার অন্যান্য উপায়গুলোর দিকে নজর দেই।
এর মধ্যে কিছু বিষয় পরবর্তী স্লাইডে বর্ণনা করা হয়েছে।
আদর-সোহাগঃ একান্ত ব্যক্তিগত শারীরিক অংশে স্পর্শ।
চুম্বনঃ চুমুতে জিহ্বার ব্যবহার। একে “ফ্রেঞ্চ কিস”- ও বলা হয়।
শারীরিক মিলনঃ পুরুষাঙ্গ ও যোনীর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মিলন।
ডেটিংঃ ছেলে ও মেয়ের একান্তে সাক্ষাৎ।
মুখ মেহনঃ শরীরের একান্ত ব্যক্তিগত অংশ মুখ দিয়ে স্পর্শ করা।
হস্তমৈথুনঃ স্বহস্তে যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে তৃপ্তি লাভ করা।
উপরের বিষয়গুলি বিভিন্ন ধরণের আচরণকে ব্যাখ্যা করে। পরের স্লাইডে যাওয়ার আগে, সম্ভব হলে উপরের বিষয়গুলোর সাথে আরও কিছু যোগ করো এবং তোমার তালিকাটি সম্পূর্ণ করো।
এই তালিকাটি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবুও সাধারণভাবে তালিকাটি নিম্নরূপ-
১. কারো কথা ভাবা
২. অতিরিক্ত প্রশংসা
৩. ডেটিং
৪. চিঠিতে/ মেসেজে ভাব বিনিময়
৫. একত্রে সময় কাটানো
৬. হাত ধরা
৭. জড়িয়ে ধরা
৮. চুম্বন
৯. আদর সোহাগ
১০. হস্তমৈথুন
১১. মুখমেহন
১২. শারীরিক মিলন
অনেকেই মনে করে, শারীরিক মিলনই হচ্ছে ঘনিষ্ঠতার সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। কিন্তু এটিই একমাত্র উপায় নয়, অন্যান্য আচরণগুলো বরং আরও ভালো এবং অনেক বেশি নিরাপদ
এই আলোচনার মধ্যে কীভাবে ভালোবাসা ও সম্পর্ক আসে?
অনেকেই মনে করে, ঘনিষ্ঠতা যত বেশি হয় আন্তরিকতা তত বাড়ে, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ভালোবাসার সম্পর্ককে গভীর করে।
তুমি কি ভাবছো? তোমার মতামত সহপাঠীদের সাথে আলোচনা কর।
ভালোবাসার সম্পর্কটি অনেকটাই একটি মানুষের মাঝেই সারা পৃথিবীকেই খুঁজে পাওয়ার মতো। একে অপরের মাঝে হারিয়ে যাওয়া। ভালোবাসা সৃষ্টিকর্তার একটি অনবদ্য উপহার।
দায়িত্বশীল শারীরিক সম্পর্কে জোরজবরদস্তির কোনো স্থান নেই;
বরং রয়েছে পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা আর নিরাপত্তা।
যা এইচআইভি, যৌনরোগ ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ থেকে রক্ষা করে।
এটা তোমার সারা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয়:
দায়িত্বশীল শারীরিক সম্পর্ক মানেই পারস্পরিক সম্মানবোধ, দায়িত্ব ও নিরাপত্তা।
১. কোন প্রকার জোরজবরদস্তি ছাড়া পরস্পরের সম্মতিক্রমেই সম্পর্ক অনেক বেশি আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য হয়।
২. যৌনরোগ, এইচআইভি- এইডস ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই যে কোনো ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন
৩. এইচআইভি-এইডস সহ অন্যান্য যৌনরোগ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই কনডম ব্যবহার করা প্রয়োজন
দায়িত্বশীল সম্পর্ক হলো-
- যেখানে পরবর্তীতে কোনো অনুশোচনা ও নেতিবাচক প্রভাব থাকবে না;
- সারাজীবনের বন্ধুত্ব এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকবে;
- যেখানে টাকা বা উপহারের কোনো ভূমিকা নেই।
দায়িত্বশীল সম্পর্ক বিষয়ে এর বাইরে কোনো মত নেই। যদি কেউ ভিন্ন কিছু বলে তবে তা ভুল।
কেউ কেউ মনে করে শারীরিক সম্পর্ক সমস্যা সমাধান করে। শারীরিক সম্পর্ক হলে স্তন, নিতম্ব ও যৌনাঙ্গ আকারে বাড়ে।
তাঁরা বলে শারীরিক সম্পর্ক মাসিকের ব্যথা দূর করে। শারীরিক সম্পর্ক শরীরকে সুস্থ রাখে।
অনেকে এও ভাবে, শারীরিক মিলনে মানসিক ও শারীরিক উন্নতি হয়।
এমন অনেকে আছে যারা উপহার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়ার জন্য একের অধিক সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক রাখে।
তোমার মতামত সহপাঠীদের সাথে আলোচনা কর।
কুমারিত্ব বা ভার্জিনিটি (Virginity) কি শুধু মেয়েদের বিষয়?
একটি মেয়ে যখন কুমারিত্ব হারায় সবাই তাকে ব্যভিচারী বলে, কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি প্রশংসিত হয়। সবাই তাকে বলে, “সত্যিকারের পুরুষ।” এটি মূলত জেন্ডার অসমতা বা বৈষম্য।
তোমরা কি জানো কুমারিত্ব বা ভার্জিনিটি কি? আলোচনা কর। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার তালিকাটি আবার দেখ (স্লাইড-১০)।
ভার্জিনিটি কি আসলেই হারিয়ে যায়?
ভার্জিন হচ্ছে সেই ব্যক্তি (ছেলে বা মেয়ে) যার কোনো শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা হয়নি। প্রত্যেকে শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা না নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। যে কেউ যতদিন খুশি অভিজ্ঞতা না নিয়ে থাকতে পারে। ভার্জিনিটি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্যই।
শুধুমাত্র শারীরিক মিলন হলেই ভার্জিনিটি হারায়।
অন্য বিষয়গুলো যেমন হাতধরা, আদর-সোহাগ, হস্তমৈথুন এগুলোর ভার্জিনিটির উপর কোনো প্রভাব নেই। তার মানে, ভার্জিনিটি কখন হারাবে তা আমাদের উপর নির্ভর করে এবং এক্ষেত্রে নিরাপত্তা, পারস্পরিক সম্মতি ও যত্ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
শারীরিক মিলনের জন্য প্রস্তুত (শারীরিক ও মানসিকভাবে) হওয়ার আগে ছেলে মেয়েদের পরস্পরকে জোর করা ঠিক নয়। এখানে প্রচলিত কিছু বিষয় দেওয়া হলো যা সাধারণত অপরকে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতে প্রলুব্ধ করে।
আর মেয়েরা বলে-
কেউ যদি তোমাকে এসব কথা বলে তাহলে তুমি জানবে, তোমাকে বোকা বানানো হচ্ছে। তাদের বলো, অন্য কোনো বোকাকে খুঁজতে।
অধিকাংশ মানুষই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণবোধ করে। যারা সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণবোধ করে তারা সমকামি। কোনো মেয়ে মেয়েদের প্রতি আকর্ষণবোধ করতে পারে। কোনো ছেলে ছেলেদের প্রতি আকর্ষণবোধ করতে পারে। আবার কিছু মানুষ একই সাথে সমলিঙ্গ অর্থাৎ ছেলে, ছেলের প্রতি ও মেয়ে, মেয়ের প্রতি এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতিও আকর্ষণবোধ করতে পারে। মানুষ ইচ্ছা করে সমকামি হয় না। বিশ্বখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এবং মার্কিন গায়ক এলটন জন হলেন স্বীকৃত সমকামি।
যাই হোক, যদি কোনো ছেলে বা মেয়ে অন্য কোনো ছেলে বা মেয়েকে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর করে; তবে তা সমকামি নয় বরং তা যৌন হয়রানি।
এ বিষয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে; কিন্তু সঠিক তথ্যগুলো নিম্নরূপ:
নিয়ম-১. কখন এবং কিভাবে নিজের সেক্সুয়ালিটি প্রকাশ করবে, তা সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার একমাত্র তোমারই।
নিয়ম-২. শারীরিক মিলনের সিদ্ধান্ত, খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বিষয়টি এমন নয়, যা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
তুমি এবং তোমার সঙ্গী একত্রে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
দু'জনের মতামতই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
শারীরিক মিলন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সকলেই শারীরিক মিলন করে এ কথাগুলো গুরুত্বহীন। সবাই শারীরিক সম্পর্ক করে....কিন্তু ‘প্রত্যেকেই’!!
অবশ্যই নয়...তাছাড়া
‘তুমি’ হচ্ছো ‘তুমি’,
তুমি মোটেই ‘সবাই’ নও।
তোমার নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।
বাস্তবিকভাবে, শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে তোমাকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হবে;
“তুমি কি প্রস্তুত!” এই প্রশ্নগুলো, তোমাকে সেক্সুয়ালিটি নিয়ে ভাবতে এবং শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে প্রস্তুত কিনা তা বুঝতে সহায়তা করবে।
নিজেকে নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন দিয়েই শুরু করো:
১. তোমার জীবনে এখন সেক্সুয়ালিটির কি কোনো ভূমিকা আছে?
২. তুমি এখন পর্যন্ত কতটুকু ঘনিষ্ঠতার জন্য প্রস্তুত
(স্লাইড-১০ এর ‘১২টি ঘনিষ্ঠতার বিষয়’ ভেবে দেখ)
এই প্রশ্নগুলো তুমি এবং তোমার সঙ্গী সম্পর্কে, যতটা সম্ভব সততার সাথে উত্তর দাও:
প্রতিটি প্রশ্নের জন্য যে কোনো একটি উত্তর বেছে নাও: হ্যাঁ/না/সম্ভবত
৩. তোমরা কি পরস্পরকে ভালোভাবে জানো এবং পরস্পরকে নিজের জীবনের অংশ বলে মনে কর?
৪. তোমরা দুজনেই কি সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?
৫. তোমরা কি পরস্পরকে বিশ্বাস কর?
৬. একজন অন্যজনের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তোমরা কী আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও?
৭. তোমরা কি তোমাদের আলোচনায় সেক্স বিষয়ে কথা বলো?
৮. চাপের মুখে নয়; তুমি কী নিজের সিদ্ধান্তেই সেক্স করো?
প্রতিটি প্রশ্নের জন্য যে কোনো একটি উত্তর বেছে নাও: হ্যাঁ/না/সম্ভবত
৯. তোমরা কোন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা কর?
১০. তোমরা কি নিজেদের মধ্যে এইচআইভি এবং এসটিআই পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা কর?
১১. শারীরিক মিলন ছাড়াও ঘনিষ্ঠতার অন্যান্য উপায়গুলো নিয়ে তোমরা কি আলোচনা করতে পারো?
তুমি যদি বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর না বা সম্ভবত বল তবে তুমি এবং তোমার সঙ্গী শারীরিক মিলনের জন্য প্রস্তুত নও।
এ ক্ষেত্রে চুম্বন, হাত ধরা এবং জড়িয়ে ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখ এবং একমত হও।
বন্ধুত্ব এবং ঘনিষ্ঠতা খুব দ্রুত সম্ভব নয়, তোমরা যদি সত্যিকার অর্থে বন্ধু না হও তবে সে বিব্রতবোধ করতে পারে বা অতি উচ্ছ্বসিত হতে পারে। এই অবস্থায় অপেক্ষা করা প্রয়োজন।
তোমাদের জন্য অস্বস্তিকর বা অতৃপ্তিকর হয় এমন কিছু করো না। সেক্স অবশ্যই হতে হবে সুখানুভূতি এবং আনন্দের মধ্য দিয়ে।
পুনরালোচনা: তুমি কী দায়িত্বপূর্ণ সেক্সের জন্য যে মূলবিষয়গুলো আছে তার সাথে সমঝোতা করতে প্রস্তুত কী না?
তুমি কি মনে করো আমরা প্রত্যেকের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি?
আমার মনে হয়, তাই। সব সময় মনে রাখবে সিদ্ধান্ত হচ্ছে তোমার, সুতরাং সাবধানেই সিদ্ধান্ত নাও।