এইচআইভি একটি জীবাণু যা দেহরস যেমন রক্ত, বীর্য, যোনি রস এবং বুকের দুধে পাওয়া যায়।
এই জীবাণু শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি যা সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই এইচআইভি/এইডস -এর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে।
বিষয়গুলো কি বুঝতে তোমাদের কঠিন মনে হচ্ছে?
এইডস (Acquired immune deficiency syndrome) হচ্ছে এইচআইভি জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হবার পর অসুস্থ হওয়ার লক্ষণসমূহ।
এই জীবাণু রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থার উপর আক্রমণ করে, যার ফলে শরীর সংক্রামক ব্যাধি যেমনঃ গুরুতর নিউমোনিয়া, যক্ষা এবং ম্যালেরিয়ার দ্বারা সহজে আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে মানুষটি মারা যায়।
এখন পর্যন্ত এইচআইভি/এইডস-এর কোন চিকিৎসা নেই। যদিও অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ড্রাগ নামে কিছু ঔষুধ আছে, যা শরীরে এইচআইভি বিস্তার এবং এইডস-এ আক্রান্ত হওয়ার স্বভাবনা কমিয়ে দেয়।
এই ঔষুধ সব জায়গায় পাওয়া যায় না।
এই ঔষুধ এইচআইভি/এইডস থেকে আরোগ্য দেয় না কিন্তু এর বিস্তার রোধ করে বাঁচার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে।
যদি কেউ এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করা জরুরী।
এইচআইভি আক্রান্তদের সহজেই যক্ষ্মা রোগ হতে পারে। যেহেতু, এইডস রোগে আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায় সেহেতু আমাদের শরীর যক্ষ্মার জীবাণুর সাথে লড়তে পারেনা। এবং এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়। এইডসে আক্রান্তদের এক-তৃতীইয়াংশ যক্ষ্মা রোগে মারা যায়। যক্ষা রোগ এইচআইভিতে আক্রান্তদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় একটি কারণ। তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়।
এইচআইভি আক্রান্তরা যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা পেয়ে আরোগ্য লাভ করতে পারে। বাংলাদেশে বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। সবসময় যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা করালে এবং সুস্থ হলে, আরো অনেক বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে।
এইচআইভি একটি জীবাণু যা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহরস যেমন- রক্ত, বীর্য, যোনি রস এবং বুকের দুধে পাওয়া যায়। এই জীবাণু শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি যা সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ সকলেই এইচআইভি/এইডস-এর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। বিষয়গুলো কি তোমাদের কাছে কঠিন মনে হচ্ছে?
এইচআইভি শরীরে তিনভাবে সংক্রামিত হতে পারেঃ
০১. অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক
০২. সংক্রমিত রক্ত গ্রহন
০৩. গর্ভবতী মা ও তার বুকের দুধ হতে শিশুতে সংক্রমণ।
এইচআইভি প্রধানত কনডম ছাড়া শারীরিক সম্পর্কের সময় রক্ত, বীর্য, যোনিরস এর মাধ্যমে ছড়ায়।
যৌনবাহিত রোগ অথবা ধর্ষণের ফলে গোপনাঙ্গে সৃষ্ট ক্ষত, এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
কোন অবস্থায় রক্ত গ্রহণ করার সময় একজনের দেহ থেকে অপরজনের দেহে সংক্রমিত এইচআইভি রক্ত চলে যেতে পারে। সাধারণত রক্ত গ্রহণ করার পূর্বে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল এবং বর্তমানে সরকারী মেডিকেল কলেজগুলোতে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু আছে।
এইচআইভিতে সংক্রমিত মা হতে, শিশু প্রসবের সময় রক্তের মাধ্যমে এবং প্রসবের পর বুকের দুধ খেলে বিশেষ করে শাল দুধ খেলে সংক্রমিত হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের এন্টিরেট্রোভাইরাল ঔষধ দিলে মা হতে শিশুতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
না !
এইচআইভি একটি জীবাণু এবং এইডস হলো সম্মিলিতভাবে অনেকগুলি অসুখ। এ দুটি বিষয় বোঝার জন্য এর মধ্যকার পার্থক্য জানা জরুরি।
এটা একসময় সত্যি বলে ভাবা হতো, এখন আর তা নয়।
এইচআইভিতে সংক্রমিত মায়েরা পরিবার গঠন করতে পারে এবং তাদের পরিবার রয়েছে। মা থেকে শিশুতে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কিছু সতর্কতা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হয়।
যদি উভয়ের মুখেই ক্ষত, ঠোঁট ফাটা অথবা মাড়ির থেকে রক্ত ঝরে সেক্ষেত্রে গভীরভাবে চুমু খেলে ঝুঁকি কিছুটা বেশী থাকে।
হ্যাঁ !
কনডম যদি ছিঁড়ে না যায় তাহলে কোন যৌনবাহিত রোগের জীবাণু, ভাইরাস বা শুক্রাণু কোষ এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। এইচআইভি জীবাণুর ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য।
ব্যাপারটি বার বার পরীক্ষা করে প্রমাণিত কনডম ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক এইচআইভি/এইডস-জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
না!
অনেকেই হয়ত অলৌকিকভাবে সারিয়ে তোলার দাবি করতে পারে, তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এর থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়।
অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা থেকে সমাধান।
শুনতে ভালো লাগলেও, ব্যাপারটি আসলে ভ্রান্ত ধারণা।
না !
জানা মতে এ'পর্যন্ত এইচআইভি/এইডস এর কোনো আরোগ্য নেই।
এইডস হলে যে অসুখগুলো হয় তার চিকিৎসা আছে, কিন্তু এইডস থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। এইডসের ঔষুধ সব জায়গায় পাওয়াও যায় না।
না !
নিজেকে এইচআইভি/এইডস -এর হাত থেকে রক্ষা করার উপায়-
১. অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা
২. শারীরিক সম্পর্ক করলে প্রত্যেকবার সঠিক উপায়ে কনডম ব্যবহার করা
৩. কারোর সাথে ক্ষুর, দাঁত মাজার ব্রাশ, সুঁই বা কোন ধারালো যন্ত্র ভাগাভাগি করে ব্যবহার না করা
৪. রক্ত গ্রহণ, রক্ত পরীক্ষা না করা
স্পষ্ট করে বলুন!
এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্ত প্রত্যেককে আমাদের সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া দরকার।
০১. এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির দ্রুত স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করা;
০২. এইচআইভি সেবা প্রদান করে এমন ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও মেম্বারশীপ অর্জন;
০৩. এইচআইভি সংক্রমিত ব্যাক্তির খেয়াল রাখা সঙ্গী যাতে সংক্রমিত না হয় ও সঙ্গীর প্রতি সম্মান রাখা।
০৪. ভয়-ভীতি ও দুশ্চিন্তার ব্যাপারে বিশ্বস্ত কেউ বা কাউন্সেলরের সাথে কথা বলা;
০৫. প্রচুর বিশ্রাম নেওয়া এবং আনন্দে সময় কাটাবার চেষ্টা করা;
০৬. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা;
০৭. নিয়মিত মেডিকেল চেকআপসহ অন্য কোনো সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া;
০৮. সহযোগিতাগুলো গ্রহণ করা এবং সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে নিজের সাফল্যে আনন্দিত হওয়া।
০১. এইচআইভি থেকে দূরে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা;
০২. বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সমবয়সী এবং প্রতিবেশীদের সঠিক তথ্য এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করার মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণের হাত থেকে দূরে রাখা।
০৩. এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিতদের সহযোগিতা করা এবং তাদেরকে এড়িয়ে না চলা।
০১. যারা সংক্রমিত তাদের কথা চিন্তা করা এবং তাদের প্রতি ধৈর্যশীল হওয়া। যদি এইচআইভি/এইডস সংক্রমিত কাউকে চেনো বা কোনো আত্মীয় সংক্রমিত হতে দেখো তাকে কোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারা যায় কি না।
০২. কোন আত্মীয় বা প্রতিবেশীর দ্বারা যৌন হয়রানির কোন ঘটনা জানলে তা কর্তৃপক্ষকে জানাও। ধর্ষণ এবং অত্যাচার করা শুধু একটি অপরাধই নয়, বরং তরুণ বিশেষত মেয়েদের সংক্রমিত হবার এটি একটি সহজ মাধ্যম।
০৩. সমাজে যাতে আরও মানুষ সংক্রমিত না হয় তা রোধ করতে সহযোগিতা করা। অন্যদের তথ্য প্রদান করা, যা তাদেরকে দায়িত্বশীল যৌন আচরণের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবে।
০৪. ভাল ব্যবহার এবং দায়িত্বশীল আচরণ সকলের জন্যই ভাল উদাহরণ হিসেবে থাকবে।
এইচআইভি/এইডস সংক্রমিত বন্ধুরা তোমাদেরই বন্ধু।
তাই আমরা একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।
এইচআইভি পরীক্ষা-
এসো স্লাইডে উল্লেখিত দুজনের এইচআইভি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করি।
সজল এবং রিয়ার গত ছয় মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক। সজল তার বান্ধবী রিয়াকে সাথে নিয়ে ভলান্টারি কাউন্সেলিং এন্ড টেস্টিং (ভিসিটি) তথা এইচআইভি পরীক্ষা করাতে যেতে চায়।
সজল জানে যে, এইচআইভি পরীক্ষা করলে তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। সে রিয়ার সাথে এই পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলতে চায়।
সজলঃ আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্কে ভালো রাখার জন্য আমাদের একত্রে এইচআইভি পরীক্ষা করা জরুরি। রিয়াঃ আমিও কিছুদিন ধরে এ'ব্যাপারে চিন্তা করছি। আমি খুশি হয়েছি যে তুমি এ'ব্যাপারে কথা বলেছ। আজকে বিকেলে গেলে কেমন হয়?
সেন্টার:
সজল এবং রিয়াকে একজন রিসেপশনিস্ট বন্ধুত্বসুলভ স্বাগত জানাল। সে তাদেরকে রেজিস্টার করাল এবং গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য একটি সিরিয়াল নং দিল। তারা কাউন্সেলরের সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
কাউন্সেলরের কক্ষঃ
কিছুক্ষণ পরে তাদেরকে একটি আলাদা কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো।
যেখানে একজন কাউন্সেলর তাদেরকে পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা এবং প্রক্রিয়াটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করল।
যদি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় তবে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ দিয়ে হাত থেকে রক্ত নেওয়া হয়। পরিচ্ছনতা ও নিরাপত্তার খাতিরে তারা একই সুঁই দ্বিতীয়বার ব্যবহার করে না। এর জন্য সামান্য কয়েক মিনিট দরকার।
তারা যখন ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে তখন কাউন্সেলর তাদেরকে এইচআইভি নেগেটিভ বা পজিটিভ -এর অর্থ কী তা ব্যাখ্যা করে বলে। একইসাথে কনডম ব্যবহার করার গুরুত্ব সম্বন্ধে বোঝায়।
কিছু সময় পরে পরীক্ষার ফলাফল আসার পরঃ
সজল এবং রিয়া উভয়ের পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। এখন তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কনডম ব্যবহার না করলে রিয়া গর্ভবতী হতে পারে। এছাড়া দুজনকেই পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে।
যদি তা না হয় বা তাদের মধ্যে একজন যদি কনডম ছাড়া নতুন কোন সঙ্গী বা যৌনকর্মীর সাথে সম্পর্ক করে, তারা উভয়েই সংক্রমিত হবার ঝুঁকিতে থাকবে এবং তাদেরকে পুনরায় পরীক্ষা করতে হবে।
যদি তোমার কোন প্রশ্ন থাকে তবে সংশ্লিষ্ট ইউবিআর ক্লিনিকে/এইডস নিরাময় কেন্দ্রে/সরকারী ক্লিনিক বা হটলাইন নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করতে পারো।